Latest Notes

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কবিতার প্রশ্ন উত্তর | একাদশ শ্রেণি সেমিস্টার ১ বিশাল ডানাওয়ালা থুরথুরে এক বুড়ো – গাবিরিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ সাম্যবাদী (কবিতা) – কাজী নজরুল ইসলাম ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (কবিতা)- মাইকেল মধুসূদন দত্ত তেলেনাপোতা আবিষ্কার(গল্প) – প্রেমেন্দ্র মিত্র ছুটি (Chhuti) – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিড়াল – বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় পুঁই মাচা MCQ একাদশ শ্রেণী | 1st Semester পুঁই মাচা-বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় MCQ from The Bangle Sellers – Sarojini Naidu

১। সামরিক ইতিহাস চর্চার গুরুত্ব কী?

উত্তরঃ নতুন সামাজিক ইতিহাসে শুধুমাত্র যুদ্ধের কারণ ও ফলাফলের মধ্যে যুদ্ধ বিষয়ক আলোচনা সীমাবদ্ধ নেই, যুদ্ধের
গুটিনাটি বিষয়ও যে যুদ্ধকে প্রভাবিত ও ফলাফলকে নিয়ন্ত্রণ করে তা সামরিক ইতিহাসে আলোচিত হয়েছে। সামরিক ইতিহাস থেকে সহ বিভিন্ন সময়ে সংগঠিত যুদ্ধের কারণ, পদ্ধতি, সমরসজ্জা, যুদ্ধের আদর্শগত দিক প্রভৃতি বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায়, যেগুলি যুদ্ধকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে। তাই আধুনিক সামাজিক ইতিহাসে সামরিক ইতিহাস চর্চা গুরুত্বপূর্ণ।

২। ‘সরকারি নথিপত্র’ বলতে কী বোঝায়?

উত্তরঃ ‘সরকারি নথিপত্র’ বলতে বোঝায় পুলিশসহ সরকারি আধিকারিকদের গোপন ও প্রকাশ্য লেখা চিঠিপিত্র, প্রতিবেদন,
বিবরণ, সমীক্ষা, নোটিশ প্রভৃতি। এই সব নথিপত্র থেকে সরকারি মনোভাব, পদক্ষেপ, উদ্যোগ প্রভৃতি জানার পাশাপাশি ঐ নির্দিষ্ট ঘটনা সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়। যেমন – হান্টার কমিশনের রিপোর্ট থেকে শিক্ষা সম্পর্কিত বিষয়, নীল কমিশনের রিপোর্ট থেকে কৃষক বিদ্রোহের কথা জানতে পারা যায়।

সরকারি নথিপত্রগুলি সরকারের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গী থেকে লেখা হয় বলে জনগণের দৃষ্টিভঙ্গী উপেক্ষিত থাকে এবং অনেকক্ষেত্রে বিকৃত তথ্যের উপস্থাপনা সমকালীন ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।

৩। স্কুল বুক সোসাইটি কেন প্রতিষ্ঠিত হয়?

উত্তরঃ অষ্টাদশ শতকের শেষ দিক থেকে সরকারি ও বেসরকারি উদ্দ্যোগে বাংলা তথা ভারতে বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হলে সর্বস্তরে পাঠ্যপুস্তকের অভাব লক্ষ্য করা যায়। ইংরাজি ও বাংলা ভাষায় পাঠ্যপুস্তক রচনা, মুদ্রণ ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণের উদ্দেশ্যে ১৮১৭ খ্রিঃ ডেভিড হেয়ার কলকাতায় স্কুল বুক সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন।

৪। মধুসদন গুপ্ত স্মরনীয় কেন?

উত্তরঃ কলকাতা সংস্কৃত কলেজের ছাত্র মধুসূদন গুপ্ত সামাজিক কুসংস্কার ও জাতিচ্যুত হওয়ার ভয় না পেয়ে ১৮৩৬ খ্রিঃ ১০ই
জানুয়ারি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে প্রথম শব ব্যবচ্ছেদ (মৃতদেহ কাটা / অ্যানাটমি শিক্ষা) করেন যা ছিল রক্ষণশীল
গোষ্ঠীর বিপ্রতীপে যুগান্তরকারী ঘটনা। তাছাড়া তিনি ‘লন্ডন ফার্মাকোপিয়া’ ও ‘অ্যানাটমি’ গ্রন্থ দুটি বাংলায় অনুবাদ করে ভারতে আধুনিক চিকিৎসাবিদ্যা চর্চাকে সহজসাধ্য করে তোলেন।

৫। লর্ড হার্ডিঞ্জ-এর ‘শিক্ষাবিষয়ক নির্দেশ নামা’ গুরুত্বপূর্ণ কেন?

উত্তরঃ ১৮৪৪ খ্রিঃ লর্ড হার্ডিঞ্জ এক নির্দেশনামার মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে ইংরাজি ভাষা জানা ব্যক্তিদের অগ্রাধিকারের নীতি ঘোষণা করলে, ভারতীয় মধ্যবিত্তশ্রেণি ইংরাজি ভাষা ও পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছিল। এই প্রবল আগ্রহ
ইংরাজি স্কুল স্থাপনে বাঙালি তথা ভারতীয়দের উদ্যোগ বাড়িয়েছিল। অন্যদিকে দেশীয় ভাষা ও শিক্ষা পদ্ধতির গুরুত্ব
হ্রাস পেয়েছিল।

৬। ‘বাংলার নবজাগরণ’ বলতে কী বোঝায়?

উত্তরঃ উনিশ শতকে পাশ্চাত্য শিক্ষা-সংস্কৃতির প্রভাবে বাংলা তথা ভারতের মধ্যযুগীয় কুসংস্কার ও সংকীর্ণ মানসিকতার
পরিবর্তে যুক্তিবাদ, মানবতাবাদ, ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবাদ প্রভৃতির ওপর ভিত্তি করে ধর্ম, সমাজ, শিক্ষা, অর্থনীতি, সংস্কৃতি প্রভৃতি
সকলক্ষেত্রে যে সংস্কার আন্দোলনের সূচনা হয় তাকে ইউরোপের রেনেসাঁর সাথে তুলনা করে বেশীরভাগ ঐতিহাসিক
একেই ‘বাংলার নবজাগরণ’ আখ্যা দিয়েছেন।

৭। ফরাজি আন্দোলন ব্যর্থ হল কেন?

উত্তরঃ ফরাজি আন্দোলন বিভিন্ন কারণে ব্যর্থ হয়েছিল –

(ক) দুদুমিঞা (মহম্মদ মহসীন)-এর মৃত্যুর পর নোয়া মিঞা ফরাজি আন্দোলনের নেতৃত্ব গ্রহণ করলে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কর্মসূচীর পরিবর্তে অতিরিক্ত পরিমানে ধর্মের উপর গুরুত্ব আরোপ করায় এই আন্দোলন মুসলিম সম্প্রদায়ের
কিছু মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়লে আন্দোলনের সামাজিক ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ে।

(খ) দুদুমিঞার পরবর্তীকালে যোগ্য নেতৃত্বের অভাব ও সাংগঠনিক দুর্বলতা, ফরজি আন্দোলনকে ব্যর্থতার পর্যবসিত করেছিল।

(গ) ফরাজিরা পুরানো অস্ত্রশস্ত্র যেমন – লাঠি, বল্লম, দাঁ, কুড়ুল বা কুঠার প্রভৃতি নিয়ে আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত ব্রিটিশ ও অন্যান্য শাসকশ্রেণি (জমিদার, মহাজন)-এর বিরুদ্ধে অসম লড়াইয়ে পরাজয় স্বীকার করেছিল।

৮। তিতুমীর স্মরনীয় কেন?

উত্তরঃ বাংলার ওয়াহাবি আন্দোলনের প্রধান নেতা তিতুমীর (মীর নিশার আলি) ইসলাম ধর্মের সংস্কারের পাশাপাশি ইংরেজ
সরকার, জমিদার, মহাজন ও নীলকরদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন এবং এই উদ্দেশ্যে উত্তর ২৪ পরগণা জেলার বসিরহাট মহকুমার নারকেলবেড়িয়া গ্রামে বাঁশের কেল্লা তৈরী করে একটি স্বাধীন দপ্তর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেখানে তিতুমীর নিজেকে ‘বাদশা’, মৈনুদ্দিনকে প্রধানমন্ত্রী ও গোলাম মাসুমকে সেনাপতি ঘোষণা করে স্বল্পকালীন স্বাধীন সরকার চালিয়েছিলেন। শেষপর্যন্ত ইংরেজদের কামানের আঘাতে তাঁর বাঁশের কেল্লা ধ্বংস হয় এবং তিনি নিহত হন।

৯। শিক্ষিত বাঙালি সমাজের একটি অংশ কেন মহাবিদ্রোহের (১৮৫৭) বিরোধিতা করেছিল?

উত্তরঃ শিক্ষিত বাঙালি সমাজের একটি অংশের মহাবিদ্রোহের (১৮৫৭ খ্রিঃ) বিরোধিতা করার পিছনে যুক্তি ছিল –

(ক) শিক্ষিত বাঙালি মধ্যবিত্ত শ্রেণির একটি অংশ মনে করেছিল যে, বিদ্রোহিরা সফল হলে ভারতে মধ্যযুগীয় সামস্ততান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে এবং ইংরেজরা যে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে শুরু করেছিল তা ব্যহত হবে।

(খ) শিক্ষিত বাঙালি সমাজের একটি অংশ ইংরেজ সরকারের অধীনে কর্মরত ছিল। বিদ্রোহিরা সফল হলে তাদের কাজ হারাবার আশঙ্কায় তারা মহাবিদ্রোহের বিরোধিতা করেছিল।

(গ) উনিশ শতকের বাংলা তথা ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা ও বিজ্ঞান চর্চার প্রসার ব্যহত হতে পারে এই আশঙ্কায় শিক্ষিত বাঙালি সমাজ এই বিদ্রোহের বিরোধিতা করেছিল।

১০। ব্যক্তচিত্র আঁকা হয় কেন?

উত্তরঃ সামাজিক ও ধর্মীয় কুসংস্কার, প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরাসরি প্রতিবাদের পরিবর্তে উপহাসমূলক ও
বিদ্রূপাত্মক সমালোচনার জন্য ব্যঙ্গচিত্র আঁকা হয়।
যে কোন বিষয় ও ঘটনাকে সাধারণ মানুষের কাছে সহজ সরল ও আনন্দদায়ক করতে ব্যঙ্গচিত্র অঙ্কন করা হয়। অসাধারণ
ব্যঙ্গচিত্র শিল্পী ছিলেন গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর যাঁর বিভিন্ন চিত্রে ঔপনিবেশিক সমাজ ব্যবস্থার ছবি তুলে ধরা হয়েছে।
গিরিন্দ্রনাথ দত্ত ১৮৭২ খৃষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে অমৃতবাজার পত্রিকায় মিউনিসিপ্যাল আইনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম
বাংলা ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ করেন।

১১। নবগোপাল মিত্র কে ছিলেন?

উত্তরঃ ইংরেজ সরকার ও খ্রিস্টান মিশনারীদের ধর্মান্তরিতকরণ ও হিন্দুধর্মের বিরোধিতার ফলে হিন্দুরা যখন নিজেদের ধর্ম সম্পর্কে হীনমন্যতায় ভুগছিলেন সেই সময় হিন্দুদের মধ্যে আত্মনির্ভরশীলতা, জাতীয়তাবাদ ও স্বদেশ প্রেমের বিস্তার ঘটাতে নবগোপাল মিত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। হিন্দুকেন্দ্রিক ভারতে পুনর্জাগরণের উদ্দেশ্যে ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দে ‘হিন্দুমেলা’ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি জাতীয় প্রতীকগুলির মর্যাদা দান, দেশীয় ভাষার চর্চা, হিন্দু ধর্মের অতীত গৌরবগাঁথার প্রচার, শরীর চর্চার মাধ্যমে আত্মশক্তি জাগরণে উদ্যোগী হয়েছিলেন। এছাড়া তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ন্যাশনাল প্রেস, ন্যাশনাল পেপার, ন্যাশানাল সোসাইটি, ন্যাশানাল স্কুল, ন্যাশনাল থিয়েটার, ন্যাশনাল জিমনাসিয়ম এবং ন্যাশানাল সার্কাস ইত্যাদি। এই প্রভূত কর্মকাণ্ডের জন্য তাঁর ডাকনাম দেওয়া হয়েছিল ‘ন্যাশনাল মিত্র।

১২। উনিশ শতকের বাংলায় জাতীয়তাবাদের বিকাশে বঙ্কিমচন্দ্রের কীরূপ ভূমিকা ছিল?

উত্তরঃ ভারতীয় জাতীয়তাবাদের জনক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাঁর ‘আনন্দমঠ’ উপন্যাস, ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকা প্রভৃতি প্রকাশের
মাধ্যমে ইংরেজ সরকারের ভারতীয়দের ওপর অকথ্য অত্যাচারের নগ্নরূপ তুলে ধরার পাশাপাশি ভারতীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সুমহান দিকগুলিরও সূক্ষাতিসূক্ষভাবে বিশ্লেষণ করেন। তিনি ‘আনন্দমঠ’ উপন্যাসের মাধ্যমে জন্মভূমিকে মাতৃরূপে কল্পনা করে ‘বন্দেমাতরম’ সঙ্গীতের ব্যবহার করেন যা পরবর্তী সময়ে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে ভারতীয় জাতীয়তাবাদের মূল মন্ত্রে পরিণত হয়ে ওঠে।

১৩। জাতীয় শিক্ষা পরিষদ কেন প্রতিষ্ঠিত হয়?

উত্তরঃ বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ১৯০৬ খ্রিঃ জাতীয় শিক্ষা পরিষদ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল –

(ক) ঔপনিবেশিক শিক্ষার বিকল্পরূপে জাতীয় আদর্শ অনুসারে সাহিত্য, বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা করে শিক্ষার্থীকে আত্মনির্ভরশীল ও স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলা।

(খ) মাতৃভাষায় শিক্ষাদানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেশসেবার মনোভাব জাগিয়ে তোলার পাশাপাশি তাদের মধ্যে নৈতিক শিক্ষা ও জাতীয়তাবোধের প্রসার ঘটানো।

১৪। ‘বিদ্যাসাগর সাট’ বলতে কী বোঝায়?

উত্তরঃ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বাংলা মুদ্রণে অক্ষর বিন্যাসের সমস্যা দূরীকরণে বিজ্ঞান সম্মত উপায়ে ছেদ, যতি চিহ্নের ব্যবহার সহ বাংলা বর্ণ বিন্যাস ও সাজানোর পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। তাঁর নামানুসারে এর নাম হয় ‘বিদ্যাসাগর সাট’।

১৫। বাংলা ছাপাখানার বিকাশে লাইনোটাইপ প্রবর্তনের গুরুত্ব কী?

উত্তরঃ সারিবদ্ধভাবে লেখা ছাপানোর পদ্ধতিকে লাইনোটাইপ বলা হয়। লাইনোটাইপ-এর বিশেষত্ব হল এতে বিভিন্ন ধরনের
কি-বোর্ড রয়েছে। অক্ষর, যুক্তাক্ষর, বিরামচিহ্ন ও স্পেস একসঙ্গে ছাপানো যায়। এই প্রক্রিয়ায় খবরের কাগজ, ম্যাগাজিন, বই প্রভৃতি দ্রুত এবং সহজে ছাপানো সম্ভব হয়। লাইনোটাইপের আবিষ্কার ছাপাখানার ইতিহাসে বিপ্লব ঘটায়, এর সৃষ্টিকর্তা হলেন সুরেশচন্দ্র মজুমদার।

১৬। গ্রামীণ শিল্প ও বৃত্তি শিক্ষার প্রসারে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান কীরূপ ছিল?

উত্তরঃ ঔপনিবেশিক কেরানি তৈরি শিক্ষার সমালোচনা করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শিক্ষার্থীদের স্বনির্ভর ও আত্মনির্ভরশীল করতে
গ্রামীণ শিল্প ও বৃত্তি শিক্ষার উপর জোর দিয়েছিলেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি বীরভূমে শান্তিনিকেতনের সুরুল গ্রামে শ্রীনিকেতন প্রতিষ্ঠা করেন; যেখানে সমবায় পদ্ধতিতে চাষবাস, পশুপালন এবং গ্রামীণ কুটির শিল্পমূলক শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করেন।

১৭। আধুনিক ভারতের ইতিহাস চর্চার উপাদান রূপে ‘সরকারি নথিপত্রে’ র সীমাবদ্ধতা কী?

উত্তরঃ আধুনিক ইতিহাস চর্চার উপাদান রূপে সরকারি নথিপত্রের সীমাবদ্ধতাগুলি হল-

(ক) সরকারি নথিপত্রগুলি সরকারের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গী থেকে লেখা হয়, জনগণের দৃষ্টিভঙ্গী উপেক্ষিত থাকে।
(খ) সরকারি নথিপত্রগুলিতে অনেক ক্ষেত্রে ভুল ও বিকৃত তথ্য থাকে। তাই এগুলি সমকালীন ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে
প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
(গ) সরকারি নথিপত্রগুলি ঐতিহাসিক উপাদান হিসাবে রচিত হয় না। তাই ঐতিহাসিকদের তথ্য সংগ্রহের সময় সতর্ক থাকতে হয়।

১৮। আত্মজীবনী এবং স্মৃতিকথা বলতে কী বোঝায়?

উত্তরঃ আত্মজীবনীঃ যে রচনায় লেখক তাঁর নিজের জীবনের ও সময়ের বিভিন্ন ঘটনাবলীর বিবরণ লিপিবদ্ধ করে তা গ্রন্থাকারে প্রকাশ করেন তাকে আত্মজীবনী বলে। যেমন সরলাদেবী চৌধুরানীর ‘জীবনের ঝরাপাতা’।

স্মৃতিকথাঃ অতীতের কোনো বিশেষ ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত কোনো ব্যক্তি যদি পরবর্তীকালে তাঁর স্মৃতি থেকে প্রাপ্ত সেই ঘটনার অকপট বিবরণ লিপিবদ্ধ করেন অথবা মৌখিকভাবে প্রকাশ করেন তাহলে তাকে স্মৃতিকথা বলে। যেমন- দক্ষিণারঞ্জন বসুর ‘ছেড়ে আসা গ্রাম’।

১৯। এদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে খ্রিষ্টান মিশনারীদের প্রধান উদ্দেশ্য কী ছিল?

উত্তরঃ এদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারে খ্রিস্টান মিশনারিদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল-

(ক) খ্রিস্টধর্মের প্রচার ও প্রসার ঘটানো।
(খ) পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তার ও নারীশিক্ষার প্রসার ঘটানো।
(খ) বিভিন্ন প্রকার সামাজিক ও কু-সংস্কার ও গোঁড়ামি দূর করা।

২০। ‘নববিধান’ কী?

উত্তরঃ কেশবচন্দ্র সেন-এর হিন্দুমতে নিজকন্যার বিবাহ,রামকৃষ্ণ প্রীতি, খ্রিস্ট প্রীতি, চৈতন্য প্রীতি ইত্যাদি বিষয়ে মতানৈক্যের
কারণে শিবনাথ শাস্ত্রী, আনন্দমোহন বসু, দ্বারকানাথ বন্দোপাধ্যায় প্রমুখ তরুণ ব্রাহ্মরা ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় ব্রাহ্মসমাজ থেকে বেরিয়ে এসে সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠা করলে কেশবচন্দ্র সেন তাঁর উদারপন্থী অনুগামীদের নিয়ে সর্বধর্ম সমন্বয়ের আদর্শে নববিধান ঘোষণা করেন এবং নববিধান ব্রাহ্মসমাজ গঠন করেন।

২১।  চুঁয়াড় বিদ্রোহের (১৭৯৮-৯৯) গুরুত্ব কী ছিল?

উত্তরঃ ১৭৯৮-৯৯ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত চুঁয়াড় বিদ্রোহের গুরুত্ব হল –

(ক) চুঁয়াড় বিদ্রোহে জমিদার ও নিরক্ষর চুঁয়াড় কৃষকরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে সামিল হয়।
(খ) এই বিদ্রোহের পর সরকার বিষ্ণুপুর শহরকে কেন্দ্র করে জঙ্গলমহল জেলা গঠন করে।
(গ) এই বিদ্রোহের পর সরকার এই অঞ্চলে নিলামের মাধ্যমে জমি বন্দোবস্ত দেওয়ার নীতি ত্যাগ করে।

২২। ফরাজি আন্দোলন কি নিছক ধর্মীয় আন্দোলন ছিল?

উত্তরঃ হাজী শরিয়ৎ উল্লাহ ইসলাম ধর্মের সংস্কার ও শুদ্ধিকরণের জন্য ফরাজী আন্দোলনের সূচনা করলেও পরবর্তীকালে তাঁর পুত্ৰ দুদুমিঞা এই আন্দোলনকে ধর্মীয় মোড়ক থেকে বের করে এনে একে সার্থক কৃষক আন্দোলনে উন্নীত করেছিলেন।

‘জমি আল্লাহর দান, সেখানে কর ধার্য করার অধিকার জমিদারের নেই’ – দুদুমিঞার এই বক্তব্যে হিন্দু-মুসলমান কৃষক
আকৃষ্ট হয়েছিলেন এবং ঐক্যবদ্ধ জমিদার বিরোধী তথা সরকার বিরোধী আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। তাই এই
আন্দোলনকে নিছক ধর্মীয় আন্দোলন না বলে একে জমিদার, মহাজন ও ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন বলাই শ্রেয়।

২৩। ‘ল্যান্ড হোল্ডার্স সোসাইটি’ কী উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়?

উত্তরঃ জমিদার রাধাকান্ত দেব, দ্বারকানাথ ঠাকুর, প্রসন্নকুমার ঠাকুর প্রমুখের উদ্যোগে ১৮৩৮ খ্রিস্টাব্দে ‘ল্যান্ড হোল্ডার্স
সোসাইটি’ প্রতিষ্ঠিত হয়। এর উদ্দেশ্যগুলি হল-

(ক) বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার জমিদারদের স্বার্থরক্ষা করা এবং জমিদারদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা।
(খ) সরকার কর্তৃক নিষ্কর জমির বাজেয়াপ্তকরণ বিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলা।
(গ) ভারতের সর্বত্র চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রসার ঘটানোর দাবী জানানো।
(ঘ) শাসন সংস্কারের জন্য সরকারের কাছে দাবী পেশ করা।

২৪। উনিশ শতকে জাতীয়তাবাদের উন্মেষে ‘আনন্দ মঠ’ উপন্যাসটির কীরূপ অবদান ছিল?

উত্তরঃ ‘আনন্দমঠ’ উপন্যাসটি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে রচনা করেন। উনিশ শতকের জাতীয়তাবাদের উত্থানে এই গ্রন্থটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল। যেমন-

(ক) এই গ্রন্থটি স্বদেশ প্রেমের উত্থান ঘটায় কারণ গ্রন্থটিতে বলা হয়েছিল যে দেশপ্রেম হল ধর্ম এবং দেশসেবা হল পূজা।
(খ) এই উপন্যাসে জন্মভূমিকে মাতৃরূপে কল্পনা করে রচিত ‘বন্দেমাতরম্’ সঙ্গীতটি পরাধীন ভারতের বিপ্লবী মন্ত্রে পরিণত হয়েছিল।
(গ) এই গ্রন্থটি দেশের যুবসমাজকে স্বদেশ ভক্তি, ত্যাগ ও সেবাধর্মের আদর্শে উদ্বুদ্ধ করে ‘স্বদেশ প্রেমের গীতা’ রূপে
চিহ্নিত হয়।

২৫। বাংলার সাংস্কৃতিক জীবনে ছাপাখানার বিকাশের প্রভাব কতটা?

উত্তরঃ বাংলার সাংস্কৃতিক জীবনে ছাপাখানার বিকাশের সুদূরপ্রসারী প্রভাব লক্ষ করা যায়। যেমন-

(ক) ছাপাখানার বিকাশের ফলে বাংলা ভাষার প্রচুর বই ছাপা হতে থাকে এবং বাংলা গদ্য সাহিত্যের বিকাশের পথ ত্বরান্বিত হয়।
(খ) ছাপাখানার বিকাশের ফলে সংবাদপত্র ও বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার দ্বারা জনগণ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সংবাদের
সাথে পরিচিতি লাভ করে। ফলে তাদের জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি পেতে থাকে।

২৬। ঔপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থা ত্রুটিপূর্ণ ছিল কেন?

উত্তরঃ ভারতে ইংরেজদের প্রবর্তিত ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থা ছিল ত্রুটিপূর্ণ। কারণ –

(ক) এই শিক্ষাব্যবস্থা ছিল পুঁথিগত। বাস্তবমুখী প্রযুক্তিবিদ্যার অভাব ছিল।
(খ) আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষাদানের মাধ্যম ছিল ইংরেজি ভাষা। ফলে উচ্চবর্গের শহুরে শিক্ষার্থীরা এই শিক্ষালাভের সুযোগ
পেলেও ইংরেজি ভাষায় অজ্ঞ বাংলার বৃহত্তর গ্রামীণ সমাজের সাধারণ মানুষ এই শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পায়নি।
(গ) কলেজ ও মাধ্যমিক স্তরের স্কুল প্রতিষ্ঠিত হলেও প্রাথমিক শিক্ষার প্রসারে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
(ঘ) এই শিক্ষাব্যবস্থায় নারী শিক্ষার প্রসারে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।

২৭। মোপলা বিদ্রোহের (১৯২১) কারণ কী?

উত্তরঃ ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে মালাবার উপকূলের মোপলারা জমিদার শ্রেণির সামন্ততান্ত্রিক শোষণের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। এই বিদ্রোহ মোপলা বিদ্রোহ নামে পরিচিত। এই বিদ্রোহের কারণগুলি হল –

(ক) কেরালার মালাবার অঞ্চলে রাজস্বের হার ছিল অত্যন্ত বেশি। অত্যাধিক হারে রাজস্ব দিতে গিয়ে কৃষকরা সর্বস্বান্ত হয়ে যেত।
(খ) এই অঞ্চলের অস্পষ্ট প্রজাসত্ব আইনের সুযোগ নিয়ে সরকার ও জমিদাররা কৃষকদের উপর তীব্র শোষণ চালাত।

২৮।  কী উদ্দেশ্যে কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল প্রতিষ্ঠিত হয়?

উত্তরঃ জয়প্রকাশ নারায়ণ, ড. রামমনোহর লোহিয়া, অচ্যুত পট্টবর্ধন প্রমুখের উদ্যোগে ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী
দল প্রতিষ্ঠিত হয়। এই দলের উদ্দেশ্য ছিল-

(ক) জাতীয় কংগ্রেসের সহায়তায় দেশে সমাজতান্ত্রিক আদর্শের রূপায়ণ ঘটানো।
(খ) কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণিকে একজোট করে তাদের দাবীগুলি পুরণের চেষ্টা করা।
(গ) কংগ্রেসের মধ্যেকার বামপন্থী নেতাদের একজোট করা।
(ঘ) কৃষক ও শ্রমিকশ্রেণির স্বার্থরক্ষা করে তাদের স্বাধীনতা আন্দোলনে সামিল করা।

২৯। ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ১৬ই অক্টোবর বাংলার নারী সমাজ কেন অরন্ধন পালন করে?

উত্তরঃ ব্রিটিশ সরকার তাদের নগ্ন সাম্রাজ্যবাদের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ১৬ই অক্টোবর বঙ্গভঙ্গ ঘোষণা করে। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলার নারী সমাজ ঐদিন অরন্ধন পালন করেন। এই কর্মসূচীর মাধ্যমে বঙ্গভঙ্গের বিষয়টিকে তাঁরা জাতীয় শোকে পরিণত করতে চেয়েছিলেন।

৩০।  ননীবালা দেবী স্মরণীয় কেন?

উত্তরঃ ননীবালা দেবী স্মরণীয় কারণ —

(ক) বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনকালে তিনি বিপ্লবীদের আশ্রয় দান ও গোপনে অস্ত্র সরবরাহ করতেন। এজন্য ব্রিটিশ সরকার তাঁকে গ্রেফতার করে।

(খ) জেলে থাকাকালীন অকথ্য অত্যাচার সত্ত্বেও তিনি বিপ্লবীদের কোনো গোপন তথ্য প্রকাশ করেননি। তাঁর দেশভক্তির আদর্শ বিপ্লবীদের মনে উৎসাহের সঞ্চার করেছিল।

৩১। সর্দার প্যাটেলকে ‘ভারতের লৌহমানব’ বলা হয় কেন?

উত্তরঃ স্বাধীন ভারতের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলকে ‘লৌহমানব’ বলা হয়। কারণ –

(ক) তিনি ভারতের স্বরাষ্ট্রসচিব ভি.পি. মেনন ও বড়লাট মাউন্টব্যাটেন-এর সহযোগিতায় কুটনীতি ও যুদ্ধনীতির মাধ্যমে ভারতের দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারতভুক্ত করে দেশকে রাজনৈতিক সংকট মুক্ত করেন।
(খ) তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ভারতের অভ্যন্তরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বা পাকিস্তানের পক্ষে যোগদানে ইচ্ছুক দেশীয় রাজ্যগুলো ভারতভুক্ত হলে ভারতবর্ষের ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়।

দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারতীয়করণ করা এবং দেশের ঐক্য প্রতিষ্ঠায় তাঁর এই লৌহকঠিন দৃঢ় মানসিকতার কারণে তাঁকে ভারতের লৌহমানব’ বলা হয়।

৩২। কী পরিস্থিতিতে রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন (১৯৫৩) গঠিত হয়েছিল?

উত্তরঃ স্বাধীন ভারত সরকার তেলেগু ভাষাভাষীদের দাবির ভিত্তিতে ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে স্বতন্ত্র ভাষাভিত্তিক রাজ্য-অন্ধ্রপ্রদেশ
গঠন করলে, এই সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে ভারতের অন্যান্য ভাষাগোষ্ঠীর মানুষরাও আন্দোলনে নামেন।

কমিশন গঠনঃ ভাষাভিত্তিক রাজ্যগঠনের দাবিতে গঠিত আন্দোলনের হিংসাত্মক প্রভাব কমাতে এবং অঙ্গরাজ্যগুলির সীমানা নির্ধারণের নীতি তৈরির উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন গঠন করেন। কমিশনের মোট সদস্য ছিলেন তিনজন, এঁরা হলেন বিচারপতি ফজল আলি, কে.এম.পানিক্কর ও হৃদয়নাথ কুঞ্জুর।

৩৩। স্থানীয় ইতিহাস চর্চা গুরুত্বপূর্ণ কেন?

উত্তরঃ সাধারণভাবে কোন একটি নির্দিষ্ট এলাকার বা অঞ্চলের জনসমাজের ইতিহাসকে স্থানীয় ইতিহাস বলা হয়। এই ধরনের ইতিহাস চর্চা গুরুত্বপূর্ণ কারণ –
(ক) এর দ্বারা স্থানীয় সমাজের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবন সম্পর্কে অনেক মূল্যবান তথ্য পাওয়া যায়।
(খ) জাতীয় ইতিহাস চর্চার ক্ষেত্রে থেকে যাওয়া ফাঁকফোকর পূরণ করতে সাহায্য করে এই ধরনের ইতিহাস।
(গ) জাতীয়তাবাদী মানসিকতা গড়ে তুলতে সাহায্য করে।
(ঘ) স্থানীয় মানুষ নিজেদের অঞ্চলের ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক প্রাচীনত্ব জেনে নিজেদেরকে সমৃদ্ধ করে।
উদাহরণ- কলহনের লেখা ‘রাজতরঙ্গিনী’ যাতে কাশ্মীরের ইতিহাস রয়েছে।

৩৪। সরকারি নথিপত্র আধুনিক ইতিহাস চর্চায় কতটা মূল্যবান তথ্য পরিবেশন করে?

উত্তরঃ আধুনিক ইতিহাস চর্চায় সরকারি নথিপত্র একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কারণ –

(ক) এগুলি থেকে ওই সময়ের বিভিন্ন আন্দোলন বা গুপ্তবিপ্লবী কার্যকলাপ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানা যায়।
(খ) এগুলি থেকে বিভিন্ন ঐতিহাসিক তথ্য, ওই সময়ের শাসন ব্যবস্থার চিত্র ইত্যাদি পাওয়া যায়।

৩৫। সংবাদপত্র ও সাময়িক পত্রের মধ্যে পার্থক্য কি?

উত্তরঃ সংবাদপত্র ও সাময়িক পত্রের মধ্যে পার্থক্য হল-

(ক) সাময়িকপত্র একটি নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে প্রকাশিত হয়। সেই ব্যবধান এক সপ্তাহ , দুই সপ্তাহ বা এক মাসও হতে পারে। অন্যদিকে, সংবাদপত্র প্রকাশিত হয় প্রতিদিন এমনকি দিনে দুইবারও কোনো কোনো সংবাদপত্র প্রকাশিত হয় ।

(খ)  সাময়িকপত্রগুলির পৃষ্ঠা আকারে ছোটো হয় এবং অনেক ক্ষেত্রে তা বইয়ের মতো বাঁধাই করা থাকে। এগুলি দামী পৃষ্ঠায় ছাপানো হয়। অন্যদিকে, সংবাদপত্রগুলির পৃষ্ঠা আকারে বড়ো হয় এবং তার পৃষ্ঠাগুলি খোলা অবস্থায় থাকে। এগুলি তুলনামূলক সস্তা কাগজে প্রকাশিত হয়।

(গ) সাময়িকপত্র কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ভিত্তিকও হতে পারে।  অন্যদিকে,  সাম্প্রতিক সমস্ত বিষয়ের খবরাখবর সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়।

৩৬। পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারে ডেভিড হেয়ারের ভূমিকা লেখো।

উত্তরঃ ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারে ডেভিড হেয়ারের ভূমিকা অপরিসীম।
(ক) আধুনিক ইংরেজি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের মাধ্যমে অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার দূর করা ও আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসার ঘটানোর জন্য ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দের ২০ জানুয়ারি হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।
(খ) ইংরেজি ও ভারতীয় ভাষায় পাঠ্যপুস্তক রচনা এবং বিনামূল্যে কিংবা নামমাত্র মূল্যে পুস্তক বিতরণ করার জন্য ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দের ৪ জুলাই তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘স্কুল বুক সোসাইটি।
(গ) প্রচলিত স্কুলগুলির উন্নতি সাধনের লক্ষ্যে তিনি ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দের ১ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠা করেন ক্যালকাটা স্কুল সোসাইটি।

৩৭। ভারতীয় ব্রাহ্মসমাজ কেন বিভক্ত হয়েছিল?

উত্তরঃ ব্রাহ্মসমাজ ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে সংস্কারের প্রশ্নে আদি ও ভারতবর্ষীয় এই দুভাগে বিভক্ত হয়েছিল ।

কেশবচন্দ্র সেনের খ্রিষ্টধর্ম প্রীতি, গুরুবাদের প্রতি আসক্তি, ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে নিজের নাবালিকা কন্যা সুনীতিদেবীর সাথে কোচবিহারের মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণের বিবাহদানের প্রশ্নে ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজে কেশব সেনের অনুগামীদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয় । ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামীকে আচার্য করে শিবনাথ শাস্ত্রীর নেতৃত্বে গড়ে ওঠে সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ । অন্যদিকে কেশবচন্দ্রের নেতৃত্বাধীন ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দে ‘নববিধান’ ব্রাহ্মসমাজে পরিণত হয়।

৩৮। শ্রীরামকৃষ্ণ কীভাবে সর্বধর্ম সমন্বয় সাধন করেছিলেন?

উত্তরঃ উনিশ শতকে হিন্দু সমাজ যখন ধর্মীয় কুসংস্কারের বেড়াজালে আবদ্ধ এবং খ্রিস্টান মিশনারী, ব্রাহ্মসমাজ ও ইয়ং বেঙ্গল দলের সদস্যদের ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলন গুলির চাপে ভারতের সনাতন ধর্মের অগ্রগতি প্রায় রুদ্ধ, তখন বাংলার সমাজে উদিত হন যুগাবতার শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব। তাঁর সহজ,সরল ও মানবতাবাদী মতবাদ সকল শ্রেণীর মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছিল। এই মতবাদের মূল কথা ছিল- “যত মত তত পথ।”

তাঁর মতে, যে নামেই ডাকা হোক না কেন- ঈশ্বর এক। তাই ভিন্ন ভিন্ন পথে যেমন গন্তব্যে পৌঁছানো যায়, তেমনি ভিন্ন মত ও পথ অবলম্বন করেও ওই এক ঈশ্বরের কাছে পৌঁছানো সম্ভব।
রামকৃষ্ণের এই সর্বধর্ম সমন্বয়ের প্রচারের ফলে বাংলায় জাতিভেদের কঠোরতা শিথিল হয় এবং  ধর্মীয় সমন্বয়ের আদর্শ শক্তিশালী হয়।

৩৯।  সন্ন্যাসি ও ফকির বিদ্রোহ কেন ব্যর্থ হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৭৬৩-১৮০০ সাল পর্যন্ত চলা এই বিদ্রোহ বিভিন্ন কারণে ব্যর্থ হয়-
(ক) ব্রিটিশ বিরোধী ফকির-সন্ন্যাসী আন্দোলন যে সব কারণে ব্যর্থ হয়েছিল সে সবের মধ্যে মূল কারণ ছিল সাংগঠনিক দুর্বলতা এবং দুর্বল নেতৃত্ব। এই বিদ্রোহের প্রথম সারির নেতারা যেমন মজনু শাহ, ভবানী পাঠকদের মৃত্যু হলে উপযুক্ত নেতৃত্বের অভাব দেখা দেয়।
(গ) অস্ত্র, রণকৌশল সবদিক থেকেই তারা ইংরেজ সৈন্যদের সমকক্ষ ছিল না। ফলে ফকির সন্ন্যাসীরা ইংরেজদের উন্নত, আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র, রণকৌশল, সামরিক প্রযুক্তি এবং বিশাল সেনাবাহিনীর কাছে প্রাণপণ লড়াই করেও হেরে যায়।

৪০। নীল চাষিদের উপর নীলকরদের অত্যাচার সংক্ষেপে লেখো।

উত্তরঃ নীল চাষে বাধ্য করার জন্য নীলকর সাহেবরা দরিদ্র নীল চাষীদের উপর নির্মম অত্যাচার চালাতো। তারা নীলচাষীদের নীলকুঠিতে আটকে রেখে চাবুক মারতো,গরু বাছুর লুট করতো এবং গৃহে অগ্নিসংযোগ ও ডাকাতি করতো। এমনকি সেই চাষীদের স্ত্রী-কন্যাকে অপহরণ করে লাঞ্চিত করতেও নীলকর সাহেবরা পিছপা হতো না।

৪১। ‘মহারানির ঘোষণা পত্রের’ (১৮৫৮) গুরুত্ব লেখো।

উত্তরঃ আধুনিক ভারতের ইতিহাসে মহারানীর ঘোষণাপত্র (১৮৫৮) যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। এই ঘোষণাপত্রের দ্বারা ইংল্যান্ডের মহারাণী ভিক্টোরিয়া ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের অবসান ঘটান এবং ভারতের শাসনভার সরাসরি নিজের হাতে তুলে নেন। জেনারেল পদের বিলোপ ঘটিয়ে ভারতের শাসনকার্য পরিচালনার দায়িত্ব ভাইসরয় বা রাজ প্রতিনিধির হাতে অর্পণ করা হয়। এই ঘোষণাপত্রের দ্বারা দেশীয় রাজন্যবর্গ ও ভারতীয় সমাজকে ব্রিটিশ শাসনের প্রকৃতি সম্পর্কে আশ্বস্ত করা হয়।

৪২। ‘হিন্দুমেলা’ কেন ব্যর্থ হয়েছিল?

উত্তরঃ নবগোপাল মিত্র কর্তৃক আয়োজিত হিন্দুমেলা বিভিন্ন কারণে ব্যর্থ হয়েছিল-

(ক ) হিন্দুমেলা ধর্মীয় সংকীর্ণতা দোষে দুষ্ট ছিল। তারা অন্যান্য ধর্মের সমস্যাগুলির প্রতি উদাসীন ছিলেন। 

(খ ) নতুন শিক্ষিত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণী হিন্দুমেলার আদর্শে কোনো উৎসাহ দেখাননি। 

(গ) হিন্দুমেলা রাজনৈতিক কর্মকান্ডে গুরুত্ব না দিয়ে শুধুমাত্র দেশাত্মবোধের প্রচারের উদ্যোগে সাধারণ মানুষ খুব বেশি উৎসাহী ছিলেন না। 

Spread the love

You cannot copy content of this page