Latest Notes

Short Questions Answers(SAQ) from Jimmy Valentine | Class 11 MCQ from Jimmy Valentine | Class XI MCQ Questions And Answers From Karma HS 2023 Questions Paper Higher Secondary 2023 Biology Question Paper pdf Higher Secondary 2023 Chemistry Question Paper pdf Higher Secondary 2023 Education Question Paper pdf Higher Secondary 2023 Economics Question Paper pdf Higher Secondary 2023 Geography Question Paper pdf Higher Secondary 2023 Music Question Paper PDF

“যে জাতি জীবন হারা অচল অসাড়
পদে পদে বাঁধে তারে জীর্ণ লোকাচার।”
–রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

ভূমিকা: বর্তমান যুগ হল বিজ্ঞানের যুগ। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতি ও বিকাশের মাধ্যমে মানুষ প্রকৃতির নানান প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠেছে। বিজ্ঞানের বিশেষ আলোকে মানুষ সাধারণ প্রাণী থেকে শ্রেষ্ঠ প্রাণীতে পরিণত হয়েছে। বিজ্ঞানের জয়যাত্রার কারণেই মানুষ পৌঁছে গেছে মহাকাশে। চাঁদ ও মঙ্গল গ্রহেও পদার্পণ করতে সক্ষম হয়েছে মানুষ। কিন্তু আজও এই একবিংশ শতাব্দীতে নানান অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের ভূত আমাদের ঘাড়ে চেপে বসে আছে।

কুসংস্কার কী? কুসংস্কার হল মানুষের যুক্তি ও বিচারহীন
অন্ধবিশ্বাস বা মিথ্যা ধারণা যা মানুষের পক্ষে অহিতকর। কেউ কেউ কুসংস্কারকে নিরীহ সাংস্কৃতিক অনুশীলন হিসাবে মনে করতে পারে, কিন্তু সেগুলি যদি উন্নতিকে বাধা দেয় এবং অজ্ঞতাকে স্থায়ী করে তবে সমাজের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে।

কুসংস্কারের উৎপত্তি: আদিম মানুষের কাছে প্রকৃতি ছিল রহস্যময়। বিজ্ঞানের জন্ম তখনও হয় নি। কাজেই বিজ্ঞানচেতনাহীন মানুষেরা বিশ্বাস করত যে যেকোনো প্রাকৃতিক ক্রিয়াকান্ডের পিছনে রয়েছে ভুত-প্রেত, অপদেবতা কিংবা অশরীরী আত্মা। সেকালের মানুষের মনে এই সমস্ত ভ্রান্ত বিশ্বাস দৃঢ়বদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বিজ্ঞানের অগ্রগতি ও জয়যাত্রার মাধ্যমে সেই সমস্ত অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার একদিন ভ্রান্ত ও ভিত্তিহীন বলে প্রমাণিত হল। কিন্তু বিজ্ঞানের এই অগ্রগতি সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ল না, ফলে অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের রাজত্ব চলতে থাকল। আবার এর পাশাপাশি কিছু শিক্ষিত মানুষ বিজ্ঞানের আলোয় আলোকিত হয়েও পুরনো রীতি, ধ্যান-ধারণা ও বিশ্বাসকে আঁকড়ে ধরে পড়ে রইল। ফলে বিজ্ঞানের অগ্রগতি হল ঠিকই কিন্তু কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসের অবসান ঘটলো না।

কুসংস্কারের প্রকারভেদ : কুসংস্কার নানা প্রকারের হতে পারে। যেমন- ব্যক্তিগত কুসংস্কার, সামাজিক কুসংস্কার, ধর্মীয় কুসংস্কার।

ব্যক্তিগত কুসংস্কার: সৌভাগ্য ফেরাতে হাতে তাবিজ-কবজ ও গ্রহরত্নাদি ধারণ আবার পরীক্ষার দিন ডিম খাওয়া, জোড়া শালিক দেখা, যাত্রাকালে পিছু ডাকা বা হাঁচি দেওয়া, বিড়ালের রাস্তা দিয়ে আড়াআড়িভাবে যাওয়া, বিধবা রমনীর দর্শন, পেঁচার ডাক শোনা কিংবা এক চক্ষু দর্শনে অমঙ্গল ইত্যাদি।

সামাজিক কুসংস্কার : ডাইনি হত্যা, শিশু বলি, সাপের কাটলে ওঝার কাছে নিয়ে যাওয় ইত্যাদি।

ধর্মীয় কুসংস্কার : গঙ্গাসাগরে সন্তান বিসর্জন, বলিদান প্রথা, দেবতাদের স্বপ্নাদেশ, মানুষের মধ্যে দেবদেবীর ভর করা, বিশিষ্ট
গাছকে বৃক্ষ দেবতা জ্ঞানে পূজা করা, ভন্ড সাধু সন্ন্যাসীর প্রতি বিশ্বাস বা গ্রহ রত্ন ধারণ, জ্যোতির্বিদ্যায় আস্থা ইত্যাদি।

কুসংস্কারের ফলাফল: কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাস মানুষের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে নিয়ে আসে নানা ধরনের সমস্যা। কুসংস্কারের জালে আবদ্ধ হয়েই সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত ভন্ড সাধুসন্ন্যাসী, জ্যোতিষী, ওঝা, তান্ত্রিকদের দ্বারা আর্থিকভাবে প্রবঞ্চিত হচ্ছে। মানসিক অশান্তির পিছনেও রয়েছে নানা কুসংস্কার। রোগ নিরাময়ের জন্য তুকতাক, জলপড়া পুজা- অর্চনা, সাপের কামড়ে প্রাণ বাঁচতে হাসপাতাল না গিয়ে ওঝা- বৈদ্যর কাছে যাওয়ায় রোগীর মৃত্যু ঘটে থাকে।

কুসংস্কার দূরীকরণে বিজ্ঞানের ভূমিকাঃ কুসংস্কার একপ্রকারের সামাজিক ব্যাধি। এই ব্যাধি থেকে রেহাই পেতে সবার আগে প্রয়োজন শিক্ষা ও বিজ্ঞান চেতনার বিস্তার।  বিজ্ঞান সর্বদাই যুক্তি ও পরীক্ষা- নিরীক্ষার উপরে প্রতিষ্ঠিত। অন্যদিকে কুসংস্কারগুলি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও পৌরাণিক কাহিনিকে ভিত্তি করে তৈরি হয়। তাই যেখানে বিজ্ঞান যেখানে থাকে সেখানে কুসংস্কার থাকতে পারে না। বিজ্ঞানই হল কুসংস্কারের বিনাশকারী। বিজ্ঞান ও বিজ্ঞান চেতনাকে আমরা যদি বইয়ের পাতায় বন্দি না রেখে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিই, তবেই কুসংস্কারের গতি রোধ করা সম্ভব। এ ব্যাপারে বিজ্ঞানের যুগান্তকারী আবিষ্কারগুলি যেমন রেডিয়ো, টিভি, ইন্টারনেট, সোসাল মিডিয়া ইত্যাদির  মাধ্যমেও কুসংস্কার -বিরোধী  আন্দোলনে সদর্থক ভুমিকা নিতে পারে।

কুসংস্কার দূরীকরণে ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকাঃ কুসংস্কার দূরীকরণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে ছাত্রসমাজের। ছাত্রছাত্রীরা যদি সুশিক্ষিত, সচেতন ও সংস্কারমুক্ত হয়, তবেই তারা ভবিষ্যতে দেশকে কুসংস্কারের অভিশাপ থেকে দেশকে মুক্তি দিতে পারবে। তারা নিরক্ষর মানুষের কাছে খুব সহজেই বিজ্ঞানের আলো পৌঁছে দিয়ে যুক্তিবাদী করে তুলতে পারে। হাঁচি- টিকটিকি, বারবেলা,অমৃতযোগ, অলৌকিক আসলেই যে যুক্তিহীন সংস্কার তা ছাত্রসমাজই খুব সহজে সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরতে পারে। সূর্য গ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ যে আসলেই প্রাকৃতিক ঘটনা এবং এর পিছনে কোনো রাহু, কেতু বা অপদেবতার হাত নেই তা সাধারণ মানুষদের খুব সহজেই এঁকে বা মডেল দিয়ে বুঝিয়ে দিতে পারে যুক্তিবাদী ছাত্রছাত্রীরাই।

উপসংহারঃ কোনো দেশ যখন কুসংস্কারে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে, তখন দেশের প্রগতিতে অনেক বাধা আসে। কুসংস্কার দূরীকরণ আসলেই খুব একটা সহজ কাজ নয়। শুধু নিরক্ষর মানুষেরাই কুসংস্কারে আবদ্ধ তা কিন্তু নয়। অনেক শিক্ষিত মানুষই এই সমস্ত যুক্তিহীন সংস্কার মেনে চলে। আপাত দৃষ্টিতে অনেক সংস্কারই নিরীহ মনে হলেও, বাস্তবে তার বহুল প্রয়োগ ও প্রচার একটি দেশের বা জাতির উন্নতির পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। তাই কুসংস্কারমুক্ত সমাজ গড়তে হবে। আর সেই জন্য দরকার বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী চেতনার প্রচার ও প্রসার। তবেই আমরা আগামী দিনে সকল অজ্ঞতা ও যুক্তিহীন সংস্কার মুক্ত হয়ে আলোর পথের যাত্রী হতে পারবো।

Spread the love

You cannot copy content of this page